মেধার বাজারে আমরা কি শুধু দাম হাঁকতেই থাকব?

মেধার মাপকাঠি আসলে কী?


এই যে এতকাল ধরে বিজ্ঞানের মতো আমরা মেধা তথা মানুষের বুদ্ধিমত্তাকে একই সূত্র কিংবা কাঠামোর মাঝে আনার চেষ্টা করছি, সেটা কি আদৌ ঠিক হচ্ছে? বর্তমান বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনায় ভালো ফলাফলকেই মেধার মাপকাঠি ধরা হয়৷ তারপর শিক্ষাজীবন শেষে বিসিএস পরীক্ষায় টিকে যাওয়াটাই হচ্ছে মেধার পরিচায়ক। এই গৎবাঁধা নিয়মটা আমাদের সমাজের মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ইতিমধ্যেই পাকাপোক্তভাবে গেঁথে গেছে। প্রতিটা মানুষের আগ্রহ, প্যাশন, ভালোবাসা যে ভিন্ন ভিন্ন সেটা আমরা কবে অনুধাবন করব? যখন সবকিছু শেষ হয়ে যাবে? যখন আর কিছুই করার থাকবে না? আপনি যদি আপনার গৎবাঁধা মাপকাঠিতে একজন মানুষের মেধা যাচাই করতে চান, তবে আপনিই ব্যর্থ; আপনিই তার মেধা খুঁজতে পারেননি৷ হয় আপনার দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, নয়তো আপনার এমন ঘুনে ধরা মস্তিষ্কের দাঁড়িপাল্লার কাজকর্ম বন্ধ করুন৷


শিক্ষাকে, জ্ঞানকে বাজারে পরিণত করে যে নির্মম প্রতিযোগিতা শুরু করেছেন সেটা বন্ধ করুন। আপনি যদি শিক্ষক হয়েও শিক্ষার্থীর মেধা খুঁজে না পান তবে শিক্ষক হিসেবে আপনার যোগ্যতাটা যাচাই করে নিন ফের; না সেই পুরোনো মাপকাঠিতে নয়, জ্ঞান আর সততার মাপকাঠিতে। জ্ঞানকে যে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ আমরা দিয়েছি এবং আর্থিক অবস্থাভেদে তার মানের যে পরিবর্তনশীল অবস্থা পুরো বিশ্বে পরিলক্ষিত হয় তা-ও দূর করা বড্ড প্রয়োজন। নিজেকে খুঁজুন, নিজেকে চিনুন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাগলা দৌঁড় নাহয় চলতেই থাকুক, তবে নিজেকে সেখানে কীভাবে দেখতে চান তা আরেকবার ভাবুন। আমি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিরোধী নই, তবে মেধা যে শুধু তাতেই প্রকাশিত হয় এই ধারণার ঘোর বিরোধী। তবে দিনশেষে আমাদের সবাইকে হয়ত আবার সেই স্রোতেই গা ভাসাতে হবে। কারণ এ শৃঙ্খল ভাঙার সাহসটা বোধহয় আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে গিয়েছে।


তারপর বলুন আপনি জিপিএ ৫ পেয়েছেন তো? ওমা, কী বলেন পাননি! আহা রে, সব গাঁধার দল!

এই ধারা চলতেই থাকবে! থামবে কী?

© ইকতেদার ফাহিম

Comments